রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে এক ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে ফরিদা আক্তার নামে এক শিক্ষিকা গুরুতর আহত হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাতে ২১টি সেলাইও নিতে হয়েছে তাকে। ভেঙে গেছে ডান হাতের একটি আঙুল। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হন।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গণে কমিটিবিহীন ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর বাঙলা কলেজে ২০১৮ সালের পর ছাত্রলীগের আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি। বর্তমানে কমিটি ছাড়াই চলছে বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগ।
সংঘর্ষে অভিযুক্ত বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক চৌধুরী বলেন, গত ২ মার্চ সাজেদুল ইসলাম রাজু নামে এক ছাত্রকে শিবির হিসেবে সন্দেহ করা হয়। তার ফেসবুক আইডি ও অন্যদের সহায়তায় তাকে শিবির হিসেবে অনেকটা শনাক্তও করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে রাজুকে ধরে পুলিশে তুলে দেয়া হয়। পুলিশ তাকে কলেজে যেতে বারণ করে- এই শর্তে রাজুকে ছেড়ে দেয়।
আহত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা
পরদিন (৩ মার্চ) সকালে রাজু আবারও কলেজে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে ধরতে যায়। এ সময় তার পক্ষ হয়ে তেড়ে আসে আরেক ছাত্রলীগ নেতা হাফিজ আলম। কিছুটা ধস্তাধস্তি হলে হাফিজ আলম ও রাজু হোস্টেলে গিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস আতঙ্কিত করে তোলে। পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। আমি এগিয়ে গেলে আমার মাথায় আঘাত করে। পরে সেটি কানে লাগে। পরে পাঁচটি সেলাই করতে হয়।
মানিক আরও জানান, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা একত্রে রাজু ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের ধাওয়া করলে রাজু ইসলামের ইতিহাস বিভাগের লেকচারার ফরিদা পারভীনের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেন। ঢাল হিসেবে শিক্ষককে ব্যবহার করেন রাজু। এ সময় রাজুকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে গেলে শিক্ষিকা হাত বাড়িয়ে আটকাতে চান। এতে তার আঙুল ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এছাড়া ওই শিক্ষিকা শরীরের অন্যান্য অংশেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন বলে দাবি তার।
ছাত্রলীগের আরেক নেতা হাফিজ আলম বলেন, কমিটি না থাকলেও আমরা ছাত্রলীগ করি। আমার সঙ্গে যারা চলাফেরা করে তাদের কয়েকজনকে শিবির আখ্যায়িত করে মারধর করতে আসে মানিক চৌধুরী গ্রুপের ছেলেরা। এতে আমরা বাধা দেই। পরে তারা দল বেঁধে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হই। সবাই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের ওপর হামলার পাশাপাশি ওরা ম্যাডামকেও ছাড়েনি। আমাদের কোপাতে গিয়ে ওরা ম্যাডামকেও কুপিয়েছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ফরিদা আক্তার বলেন, লাঠির আঘাতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর চেতনা ফিরে পেয়ে দেখি পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায়। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, কলেজেরই এক ছেলে হঠাৎ আমার কাছে এসে বলে, ম্যাডাম আমাকে বাঁচান। পেছন থেকে অনেকগুলো ছেলে লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে আসছিল। ওই ছেলেটাকে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে মার খেতে হলো। আমার দুই হাত ও মাথায় ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।
আহত শিক্ষিকার স্বামী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মৌখিকভাবে কলেজ অধ্যক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আমরা মামলা করব।
ঘটনার বিষয়ে সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌসি খানের মোবাইলফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।